Monday, July 9, 2007

দুর পাহাড়ের ধারে গোধুলীর আলো মেখে

রিকশাটা মৃদু দুলছে। বেশ মিষ্টি একটা বাতাস বাইরে। নিয়ন আলোয় জ্বলছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা। রাত তখন প্রায় সাড়ে ৯ টা। রিকশা যখন কলা ভবন পার করছে ঠিক তখনই হঠাত করেই রিকশা থামালেন তিনি। প্রতিদিন তিনি এই পথে মতিঝিল হয়ে আজিমপুর যান। আজ হঠাত করেই হোসেন সাহেবের অন্যরকম এক অনুভুতি ছুঁয়ে গেলো। রিকশা থামিয়ে তিনি কলাভবন মাঠের পাশে সাদা দেয়াল ধরে দাড়িয়ে পড়লেন। একটা টানা দুপুর, কয়েকটা ছেড়া বিকেল, শীতের সকাল, ভরা বর্ষায় পানি জমে ওঠা মাঠ। তারপর আরও অনেকগুলো শব্দ। আড্ডা দেয়া এক দল ছেলে-মেয়ে। ভাবতে ভাবতেই নোনা পানি বাধ ভাঙে চোখে। ফেলে আসা ২৫ বছরের স্মৃতি আজ তাকে পেয়ে বসেছে। চাকরি জীবনের ১৮ বছরে তার একবারও সময় হয়নি এই স্মুতিগুলোর সাথে হাত মেলাতে। দেয়াল ধরে হাটু মুড়ে বসে পড়লেন হোসেন সাহেব। অনেক হাসি-ঠাট্টার আওয়াজ তার কানে বাজছে। কত কত স্মৃতি এই পথে তার জন্য দাড়িয়ে ছিলো, কিন্তু কখনও সে পিছু ফেরেননি। চেনা বন্ধুদের মুখগুলো মনে পড়লো তার, মনে পড়লো আধ খাওয়া সিগারেটে সুখ টান। এক বারও সে তাদের সাথে যোগাযোগ করেনি। পকেটের ডাইরি বের করে অন্ধকারে হাতাতে লাগলো ফোন নম্বর। কিন্তু কারও নম্বরই তার কাছে নেই। নেই ফেলে আসা দিনের কোন অস্বিত্ব। পেছন থেকে রিকশা ওয়ালার ডাকে ঘোর কাটে তার। সেদিন বাড়ি ফিরে এক ফোটাও ঘুম হয়নি তার। শুধু ৮ বছরের মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে হোসেন সাহেব বলেছিলেন, ‘নিজেকে কখনও ভুলিস না।’

0 Comments:

Post a Comment

<< Home